สารบัญ:
- নিমপাতারউপকারিতা - ประโยชน์ของสะเดาในภาษาเบงกาลี
- স্বাস্থ্যরক্ষায়নিমেরউপকারিতা - ประโยชน์ต่อสุขภาพของสะเดาในภาษาเบงกาลี
- ১) অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ালবৈশিষ্ট্য:
- ২) রক্তচাপনিয়ন্ত্রণেনিম-এরভূমিকা:
- ৩) অ্যাজমানিয়ন্ত্রণেনিমেরউপকারিতা:
- ৪) আলসারচিকিৎসায়নিমেরব্যবহার:
- ৫) ডায়াবেটিসনিয়ন্ত্রণেনিমেরব্যবহার:
- ৬) মৌখিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিমের উপকারিতা :
- ৭) কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে নিমপাতার উপকারিতা :
- ৮) ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার ভূমিকা :
- ৯) হজমে সহায়তা করে নিমপাতার রস :
- ১০) লিভারের স্বাস্থ্যরক্ষায় নিম পাতার উপকারিতা :
- ১১) ক্যান্সার নিরাময়ে নিমের ব্যবহার :
- ১২) কোলেস্টেরল কমাতে নিম পাতার গুণাগুণ :
- ত্বকের জন্য নিম পাতার উপকারিতা – Skin Benefits of Neem in Bengali
- ১) ক্ষত এবং ফুসকুড়ি নিরাময়ে নিম পাতার উপকারিতা :
- ২) ব্রণ নিরাময়ে নিমের উপকারিতা :
- চুল পরিচর্যায় নিমের উপকারিতা – Hair Benefits of Neem in Bengali
- ১) উকুন কমাতে নিমের ব্যবহার :
- ২) খুশকি নিরাময়ে নিম পাতার গুণাগুণ :
- নিমের পুষ্টিগত মান – Neem Nutritional Value in Bengali
- নিম পাতার ব্যবহার – How to Use Neem in Bengali
- নিমপাতার ক্ষতিকর দিকগুলি – Side Effects of Neem in Bengali
আমাদেরআশেপাশেরগাছগুলিরমধ্যেঅন্যতমসুপরিচিতওষধিগুণসম্পন্ন, অধিকব্যবহারযোগ্যএকটিউপাদানহলোনিমগাছ। বলাযায়, পরিবেশবিশুদ্ধএবংজীবাণুমুক্তরাখতেপ্রত্যেকবাড়িতেনিমগাছলাগানোহয়ে। তাইপশ্চিমাদেশগুলিতেনিমগাছএকটিসুপরিচিতউদ্ভিদ। আসুনআজতবেজেনেনেইআমাদেরসুপরিচিতনিমগাছসম্পর্কেবেশকিছুগুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদশাস্ত্রেত্বকপরিচর্যায়কিংবারোগনিরাময়েএকটিঅন্যতমউপাদানহলোনিম। নিমেরঅন্যতমনামহলইন্ডিয়ানলিলাকবাডগনিয়ারো। এছাড়াওতেলেগুতেভিপা, তামিলেভিপিলাই, মালায়লমেআরুভিপিলাপ্রভৃতিবহুনামেনিমকেডাকাহয় বলাযায়, সবজাতি, সবধর্মএবংসবরাজ্যেরমানুষেরক্ষেত্রেইএটিসমানভাবেগুরুত্বপূর্ণএবংএকটিপ্রয়োজনীয়উপাদান। তবেআজকেআমরাআপনাকেজানাবোনিমগাছকিভাবেআপনারজীবনকেআরোসুন্দরকরেতুলবেএবংএইঅবিশ্বাস্যগাছটিরকিকিভালোগুণএবংখারাপগুনরয়েছেতাআপনাদের।
নিমেরবৈজ্ঞানিকনামহলোআজাদীরচতইন্ডিকা। এটিমূলতভারতেরসবকটিরাজ্যেইপাওয়াযায়। সাধারণতক্রান্তীয়এবংআধাক্রান্তীয়অঞ্চলেনিমগাছজন্মায়। এইগাছেরফলএবংবীজথেকেনিমতেলউৎপন্নহয়। বলাযায়এইগাছেরপ্রত্যেকটিঅংশেরইসমানগুরুত্বরয়েছে। পাতা, ছাল, ফল, বীজ, ডাল, নিমগাছেরপ্রত্যেকটাঅংশইসমানউপকারী।
নিমপাতাররসএকজিমাএবংসোরিয়াসিসএরমতনত্বকেররোগনিরাময়েব্যবহারহয়ে। নিমগাছেরছালযেকোনোধরনেরব্যথাকিংবাপেটেরসমস্যায়ব্যবহারকরাহয়ে। এটিখাদ্যদ্রব্যহিসেবেসংযোজনকরাযায়। নিমগাছেরফলএবংবীজথেকেনিমতেলতৈরিকরাহয়। যাবহুকাজেব্যবহৃতহয়। নিমগাছেরডালমুখেরস্বাস্থ্যরক্ষায়ব্যবহৃতহয়। মূলতদাঁতমাজারক্ষেত্রেনিমগাছেরডালব্যবহৃতহলেনিমপাতারঔষধিগুণাগুণদাঁতেরমাড়িএবংদাঁতকেসুস্থ-সবলরাখতেসহায়তাকরে। নিমতেলত্বকেরসুরক্ষায়এবংঅন্যান্যস্বাস্থ্যসমস্যারচিকিৎসারক্ষেত্রেব্যবহৃতহয়ে।
মূলতচারহাজারবছরধরেনিমগাছেরবিভিন্নউপাদানগুলিভারতীয়উপমহাদেশেগুরুত্বপূর্ণঔষধহিসেবেব্যবহৃতহয়ে। বেদএনিমকে 'সর্বরোগানিবারিনী' বলেব্যাখ্যাকরাহয়। যারঅর্থ, এটিএমনএকধরনেরউপাদানযাসমস্তরোগকেপ্রতিরোধকরতেসহায়তা। বহুবছরধরেত্বকপরিচর্যায়এবংসৌন্দর্যরক্ষায়নিমপাতারব্যবহারহয়ে। নিমগাছেরবীজ, পাতা, ডালপ্রভৃতিউপাদানগুলোকীটপতঙ্গনিয়ন্ত্রণএরজন্যকিংবাসারতৈরিরজন্যব্যবহারহয়েথাকে। যামানবশরীরেরপাশাপাশিবিভিন্নচাষেরক্ষেত্রেওব্যবহৃতহয়। (১)
নিমপাতারউপকারিতা - ประโยชน์ของสะเดาในภาษาเบงกาลี
নিমগাছেরপ্রত্যেকটিঅংশেরউপকারিতারয়েছে। তবেমূলতএরপাতারএকটিঅত্যন্তঅ্যান্টিব্যাকটেরিয়ালএবংরোগপ্রতিরোধকারীক্ষমতারয়েছে। নিমগাছেরপাতাবহুকঠিনরোগেরচিকিৎসায়ব্যবহারহয়েথাকে। হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হজমজনিতসমস্যারক্ষেত্রেনিমগুঁড়োখাওয়াহয়েথাকে। এছাড়াওএটিশরীরেররোগপ্রতিরোধক্ষমতাকেওবাড়িয়েতুলতেসহায়তাকরে। তবেজেনেনিননিমপাতারদৈনিকব্যবহারগুলো। (২)
স্বাস্থ্যরক্ষায়নিমেরউপকারিতা - ประโยชน์ต่อสุขภาพของสะเดาในภาษาเบงกาลี
আমাদেরমধ্যেপ্রত্যেকেইকিছুনাকিছুরোগভোগেরমধ্যেদিয়েদৈনিকগিয়েথাকি। যারফলেশরীরখারাপলেগেইথাকে। তবেআপনিজানেনকিআপনারহাতেরকাছেথাকানিমগাছটিআপনারএইসবরোগনির্মূলকরেপারে? তাহলেআজইজেনেনিন, নিমপাতারবিভিন্নস্বাস্থ্য-সম্মন্ধীয়উপকারিতাগুলি, যেগুলিআপনাকেসুস্থরাখতেসহায়তাকরবে।
১) অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ালবৈশিষ্ট্য:
গবেষণায়দেখাগিয়েছে, নিমএরমধ্যেরয়েছেদুর্দান্তঅ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালবৈশিষ্ট্যযাশরীরথেকেযেকোনরোগজীবাণুকেসরাতেসহায়তাকরে। মূলতনিমগাছেরপাতাঅ্যান্টিব্যাকটেরিয়ালবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এছাড়াওনিমগাছেরপাতায়রয়েছেঅ্যান্টিফাঙ্গালএবংঅ্যান্টি-ভাইরালবৈশিষ্ট্য, যানিমেরপাতাকেআরোশক্তিশালীকরেতোলে। এছাড়াওএটিযেকোনোধরনেররোগনিরাময়েগুরুত্বপূর্ণভূমিকানিয়েথাকে। গবেষণায়লক্ষ্যকরাগিয়েছে, নিমপাতারনির্যাসগুলিতেএসমিটানস,ইফ্যাকালিসএবংএসঅরিয়াসেরমতোউপাদানগুলিরয়েছে। যাযেকোনব্যাকটেরিয়াকেধ্বংসকরেশরীরেররোগপ্রতিরোধক্ষমতাগড়েতুলতেবিশেষভূমিকাপালনকরে। এছাড়াওনিমগাছেরডালথেকেসর্বাধিকঅ্যান্টি-মাইক্রোবিয়ালবৈশিষ্ট্যসম্পন্নউপাদানগুলিপাওয়া। এটিযেকোনব্যাকটেরিয়াএবংজীবাণুকেমেরেফেলতেসহায়তাকরে। এছাড়াদাঁতেরওষুধহিসেবেএগুলোকেব্যবহারকরাহতেথাকে। যেকারণেনিমডালকেদাঁতনহিসেবেব্যবহারকরাহয়। এছাড়াগবেষণায়লক্ষ্যকরাগিয়েছেযেপেয়ারাএবংনিমেরঅ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালবৈশিষ্ট্যগুলিতুলনাকরেদেখাগিয়েছে, সেখানেনিমেরমধ্যেঅত্যধিকগুণরয়েছেযাখাদ্যেরমধ্যেকাররোগজীবাণুকেনিয়ন্ত্রণকরতেপারে। এছাড়াওএটিতেনির্দিষ্টঅ্যান্টি-ইনফ্লামেটরিএবংঅ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালউপাদানহিসেবেকাজকরে। (৩)সেখানেনিমেরমধ্যেঅত্যধিকগুণরয়েছেযাখাদ্যেরমধ্যেকাররোগজীবাণুকেনিয়ন্ত্রণকরতে। এছাড়াওএটিতেনির্দিষ্টঅ্যান্টি-ইনফ্লামেটরিএবংঅ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালউপাদানহিসেবেকাজকরে। (৩)সেখানেনিমেরমধ্যেঅত্যধিকগুণরয়েছেযাখাদ্যেরমধ্যেকাররোগজীবাণুকেনিয়ন্ত্রণকরতে। এছাড়াওএটিতেনির্দিষ্টঅ্যান্টি-ইনফ্লামেটরিএবংঅ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ালউপাদানহিসেবেকাজকরে। (৩)
২) রক্তচাপনিয়ন্ত্রণেনিম-এরভূমিকা:
অত্যধিকরক্তচাপেরসমস্যায়যারাভুগছেনতাদেরজন্যএকটিপ্রয়োজনীয়উপাদানহলনিম। নিমশরীরকেভেতরথেকেপরিষ্কারকরতেসহায়তাকরেএবংরক্তবিশুদ্ধকরতেগুরুত্বপূর্ণভূমিকাকরে। নিয়মিতনিমপাতাখেলেরক্তচলাচলেরপথপ্রশস্তহয়এবংউচ্চরক্তচাপেরসমস্যাথাকলেতানিয়ন্ত্রিত। দৈনিকখালিপেটেএককাপজলেমধুমিশিয়েএবংনিমপাতাররসমিশিয়েখাওয়াগেলেএটিশরীরেররক্তচলাচলকেত্বরান্বিতকরতে। এছাড়াদৈনিকনিমপাতাগ্রহণকরতেপারলেএটিশরীরেহরমোনেরমাত্রানিয়ন্ত্রণকরে। যেকারণেযারাহরমোনেরসমস্যায়ভুগছেনতাদেরঅনেকসময়নিমপাতারগুণসম্পন্নঔষধহয়েথাকে। তবেগবেষণাএখনওচলছে। নিমপাতাব্যাবহারকরারআগেঅবশ্যইআপনারডাক্তারেরসাথেযোগাযোগকরুন।
৩) অ্যাজমানিয়ন্ত্রণেনিমেরউপকারিতা:
হাঁপানি, অ্যাজমারমতনকষ্টকরব্যধিতেযারাভুগছেনতাদেরজন্যসুখবর। আপনারবাড়িরপাশেথাকানিমগাছটিআপনারসুস্থতারকারণহতেপারে। নিমগাছেরফলএবংবীজথেকেপাওয়ানিমতেলহাঁপানিরচিকিৎসায়সহায়তা। এছাড়াওএটিকফ, জ্বরএবংকাশিনিয়ন্ত্রণেগুরুত্বপূর্ণভূমিকাপালনকরেথাকে। প্রতিদিনকয়েকফোঁটানিমতেলপানকরলেঅ্যাজমাকিংবাহাঁপানিরমতোসমস্যাগুলিথেকেদূরেযায়। মূলতহাঁপানিনিরাময়েনিমতেলআয়ুর্বেদশাস্ত্রথেকেইব্যবহারশুরুহয়। (৪)
৪) আলসারচিকিৎসায়নিমেরব্যবহার:
গবেষণায়দেখাগিয়েছে, যেকোনধরনেরপেটেররোগ, আলসারকিংবাগ্যাস্ট্রিকেরসমস্যায়নিমেরভূমিকাঅত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। মূলতনিমগাছেরছালগুঁড়োকরেযদিদৈনিকজলেমিশিয়েখাওয়াযায়এক্ষেত্রেপেটেরআলসারেরসমস্যাগুলিরসমাধানহতে। গবেষণায়দেখাগিয়েছে, নিমপাতাব্যবহারকরারফলেআলসারেরমতোসমস্যাসমাধানসম্ভব। এছাড়াওপেটেগ্যাসেরসমস্যাকিংবাগ্যাস্ট্রিকসমস্যারসমাধাননিমপাতারব্যবহারেরফলেগেছে। যারফলেআলসারেরচিকিৎসারক্ষেত্রেগুরুত্বপূর্ণভূমিকাপালনকরেনিমেরছাল। অ্যান্টিআলসারবৈশিষ্ট্যসম্পন্নহওয়ায়এটিএধরনেররোগেরনিরাময়েরক্ষেত্রেব্যবহারহয়েথাকে। (৫)
৫) ডায়াবেটিসনিয়ন্ত্রণেনিমেরব্যবহার:
রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করতে নিমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যে কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, নিম হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব প্রদর্শন করতে পারে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ব্যবহারের ফলে উপকার মেলে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগের সূত্রপাত দেখা দিলে সেই রোগের জীবাণু নাশক করতে পারে। ডায়াবেটিসজনিত অক্সিডেটিভ চাপ প্রতিরোধ করতে পারে নিম। নিম গাছ গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিক গুণ প্রদর্শন করে, যার ফলে শরীরের মধ্যে যে কোন রোগ জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এটি। (৬)
৬) মৌখিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিমের উপকারিতা:
দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার হল নিম। নিম তেল দাঁতের মাড়ির যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে। নিমের নির্যাসযুক্ত মাউথ ওয়াশ মুখের স্ট্রেপটোকক্কাস মিউট্যান্সের বৃদ্ধিকে প্রশমিত করে। এই ব্যাকটেরিয়ার ফলে মুখের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়াও তেল পরিশোধন এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে নিম তেলকে বিভিন্ন টুথপেস্টে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও নিমপাতা মাঁড়ি ও দাঁতের সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম পাতার নির্যাস দাঁতের যেকোনো ধরনের সমস্যা, মাড়ির সমস্যা, দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া নিম গাছের ডাল দিয়ে যদি দাঁত মাজা যায় কিংবা নিম গাছের ছাল চিবানো যায় তা দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম, দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কারণে এটি বিভিন্ন টুথপেস্টের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি দাঁত মাজার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। দাঁতের ব্যথা দূর করতে, দাঁত পরিষ্কার করার জন্য নিমের ডাল ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি দাঁতকে চকচকে এবং সাদা করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি মুখের মাঁড়ি এবং দাঁতের টিস্যু গুলোর মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, মুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। (৭)
৭) কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে নিমপাতার উপকারিতা:
এমন একটা সময় ছিল যে সময় কুষ্ঠ রোগ হলে মানুষকে সমাজ থেকে পরিত্যক্ত করা হত। মনে করা হত, এর সঠিক চিকিৎসা নেই। যার ফলে কুষ্ঠ আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে এলে সেটি অপরজনের হয়ে যাবে। তাই সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে মানুষটিকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হত। আমাদের মধ্যে অনেকেরই জানা নেই আমাদের হাতের কাছে থাকা নিমপাতাই এই রোগের পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। গবেষণায় লক্ষ্য করা গেছে, নিম গাছের ফল ও বীজ থেকে তৈরি তেল কুষ্ঠ রোগের নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম মিউটেজেনিক অর্থাৎ এটি কোন ব্যক্তির ডিএনএতে কোন রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। তবে নিম বীজের তেল গ্রহণের আগে একটু সাবধানে থাকুন। কেননা এটির অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে বিষাক্ত প্রভাব সৃষ্টি হয়, যা আপনার শরীরের পক্ষে ভালো নাও হতে পারে। তাই এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন। (৮)
৮) ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে নিম পাতার ভূমিকা:
মশার কামড়ে সৃষ্টি হওয়া ম্যালেরিয়া আমাদের অত্যন্ত পরিচিত একটি রোগ। তবে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে শরীর দুর্বল হয়ে ওঠে, যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু আপনি জানেন কি নিম পাতার নির্যাসে রয়েছে এক ধরনের অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা শরীরের ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে ওষুধগুলো প্রয়োগ করা হয় সেই ওষুধ গুলির মধ্যে নিম পাতার ব্যবহার হতে পারে। ইনফিউশন ম্যালেরিয়া রোগের অন্যতম প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা ক্ষেত্রে অন্যতম উপাদান হিসেবে নিমপাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। (৯)
৯) হজমে সহায়তা করে নিমপাতার রস:
বদহজম, অম্বল, বুক জ্বালা এই সমস্যাগুলি আমাদের দৈনন্দিন সঙ্গী। তবে এ সমস্যাগুলো সমাধানে নিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিমের মধ্যে হজমে সহায়ককারি কিছু উপাদান রয়েছে, যা বদহজমের সমস্যাকে কমাতে এবং খাদ্য হজমে সহায়তা করে। মূলত নিমপাতার গুঁড়ো কিংবা নিমের তরল নিষ্কাশনে করে ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত হজমজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিম, বিশেষত হজম এর জন্য উপকারী। তাই গ্যাস, অম্বল, বদহজমের মতন সমস্যাগুলিকে যদি দূরে রাখতে চান নিয়মিত নিম পাতা খাওয়া দরকার। কেননা নিম পাতায় উপস্থিত ইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলো গ্যাস্ট্রিকের এবং হজম সংক্রান্তঃ সমস্যাগুলির সমাধান করে থাকে। যার ফলে আলসারের মতো রোগের প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে এবং পেটে ফাঁপা ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা গুলো দূরে চলে যায়। (১০)
১০) লিভারের স্বাস্থ্যরক্ষায় নিম পাতার উপকারিতা:
লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে নিম গাছের ফুল গুলি। এগুলি লিভার কার্সিনোজেনেসিসে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে, যার ফলে লিভারের যেকোনো ধরনের সমস্যা কিংবা জন্ডিসের সমস্যা প্রভৃতি সমস্যায় নিমপাতার ব্যবহার প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব প্রদান করে থাকে। (১১)
১১) ক্যান্সার নিরাময়ে নিমের ব্যবহার:
বর্তমানে ভারতে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে আমাদের মাঝে সব বয়সের মানুষদেরই নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন। কেননা নিম পাতায় রয়েছে পলি স্যাকারাইডস এবং লিওমনোয়েডস নামক দুটি উপাদান যা আমাদের রক্ত থেকে ক্যান্সার এবং টিউমারেরর কোষকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। এর ব্যবহারে ক্যান্সারের জীবাণু আমাদের আশেপাশে আসতে পারে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিম পাতার নির্যাস প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। এছাড়াও নিমপাতার মিশ্রন ক্যান্সার প্রসারণ রোধ করতেও সহায়তা করে। শরীরের অনাক্রম্যতা প্রতিক্রিয়া উন্নত করে, ফ্রি রেডিক্যাল গুলি নির্মূল করে কোষ বিভাজন এবং প্রদাহ জনিত সমস্যা গুলিতে বাধা দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় নিম পাতা সহায়তা করে থাকে। নিমপাতায় থাকে প্রোটিন গ্লাইকোপ্রোটিন নামক রোগ প্রতিরোধক উপাদান। যা শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করতে এবং তার চিকিৎসা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে দেখা গিয়েছে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় নিম কার্যকর হয়েছে। নিমের যৌগ গুলি কেমো থেরাপিউটিক এজেন্ট গুলির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম রয়েছে। (১২)
১২) কোলেস্টেরল কমাতে নিম পাতার গুণাগুণ:
সমীক্ষায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে নিম পাতা। যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে রোজ যদি নিমপাতার রস কিংবা জলে ফুটিয়ে নিম পাতার জল গ্রহণ করা সম্ভব হয় সে ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল মাত্রা শরীরে কমতে লক্ষ্য করা যায়। (১৩)
ত্বকের জন্য নিম পাতার উপকারিতা – Skin Benefits of Neem in Bengali
হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে কিংবা খাদ্যতালিকায় একটু বেহিসাবি খাওয়া হয়ে গেল মুখে ব্রণ ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কখনও বা শরীরের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য সমস্যার কারণেও ব্রণ, হোয়াইট হেডস, ব্ল্যাকহেডস, পিম্পল এর মতন সমস্যাগুলি লক্ষ্য করা যায়। তবে এর সমাধান কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে। নিম পাতার বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন উপাদানগুলি ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যার কারণে কিংবা ব্রণ কমাতে নিম পাতার ফেসপ্যাক আমরা ব্যবহার করতে পারি কিংবা নিমপাতা দিয়ে তৈরি ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারি। নিম পাতার মধ্যে ভিটামিন ই প্রচুর পরিমাণে থাকার কারণে এটি ত্বককে যথার্থ আর্দ্রতা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও নিমপাতা সিদ্ধ করে নিয়ে সেই জল প্রতিদিন ত্বকে লাগালে ত্বক সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। এবার জেনে নিন কয়েকটি প্রাথমিক ত্বকের সমস্যার সমাধানে নিমের ভূমিকা গুলি।
১) ক্ষত এবং ফুসকুড়ি নিরাময়ে নিম পাতার উপকারিতা:
ত্বক পরিচর্যায় প্রাচীন যুগ থেকেই নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম তেলের মাধ্যমে তৈরি বিভিন্ন উপাদানগুলি দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের সমস্যাগুলির চিকিৎসা করে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিম এবং হলুদের মিশ্রণ ত্বকের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষ্যণগুলি নির্মূল করে। আলসার কিংবা ত্বকের যেকোনো দাগ-এর চিকিৎসা নিম দিয়ে করা হয়ে থাকে। তবে এটি কেবল মাত্র বড়দের জন্যই। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বকের যেকোনো জীবাণুর সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে। (১৪)
এবার জেনে নিন কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করে ক্ষত এবং ফুসকুড়ি নিরাময় করবেন:
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
১) জল ভালো করে ফোটাতে হবে।
২) তারমধ্যে 10-15 টি নিম পাতা দিয়ে দেবেন।
৩) পাতাটি বিবর্ণ হওয়া পর্যন্ত ফুটিয়ে যাবেন।
৪) জলের পরিমাণ যখন অর্ধেক হয়ে আসবে তখন গ্যাস নিভিয়ে দেবেন।
৫) এবার এই জলটি ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করবেন।
৬) প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার আগে তুলোয় ভিজিয়ে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে শুয়ে পড়বেন।
৭) এছাড়াও আপনার স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা নিম তেল মিশিয়ে স্নান হয়ে গেলে জলটা সারা শরীরে ঢেলে দিন এর ফলে শরীর জীবাণুমুক্ত থাকবে।
২) ব্রণ নিরাময়ে নিমের উপকারিতা:
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তাদের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল ব্রণ। তবে এক্ষেত্রে এটি নিরাময়ের জন্য হাতের কাছেই রয়েছে নিমপাতা। পাশাপাশি যে সমস্ত ব্রনর কারনে ব্রেকআউট ত্বকে দেখা যায় সে গুলির সমাধানেও নিমপাতা ব্যাবহার করতে পারে। নিম পাতা এবং হলুদের পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে মুখে ব্রনর দাগ কমে যেতে সহায়তা করে এবং এটি ত্বককে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং উজ্জ্বল করে তোলে। প্রয়োজনে নিম পাতা হলুদ একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে। এর পাশাপাশি নিমের মধ্যে রয়েছে অন্যতম ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যসমূহ। যা ত্বককে খুব বেশি তৈলাক্ত না করে শুষ্কতা থেকে মুক্তি দেয় এবং ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা করে। ত্বকে যেকোনো ধরনের চুলকানির ক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি চোখের ডার্ক সার্কেল দেখা দিলেও সেক্ষেত্রেও নিমপাতার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে ও নিম গুরুত্বপূর্ন ভূৃমিকা নিয়ে থাকে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
১) নিম পাতা জলে ফুটিয়ে নিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
২) ব্রণের দাগ এবং পিগমেন্টেশন নিরাময়ের জন্য নিম পাউডার জলের সাথে মিশিয়ে ব্রণের দাগের ওপর ব্যবহার করতে পারেন।
৩) ত্বকে অত্যধিক ব্রণর সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৪) নিম পাতা, তুলসী এবং চন্দন কাঠের গুঁড়ো ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে গোলাপজল দিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
৫) এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
৬) ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস এর সমস্যা থাকলে 2 থেকে 3 ফোটা নিম তেল জলের সাথে মিশিয়ে মুখে মেখে 15 মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৭) নিম পাতা সিদ্ধ করে নিয়ে তারমধ্যে কমলালেবুর খোসা এবং বিট দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন কমলালেবুর খোসা এবং নরম হয়ে এলে সেটা প্যাক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন সমস্যার পাশাপাশি দাগ দূর হবে।
৮) এই প্যাকটি ব্রণ পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে। ব্রণ দূর করতে নিয়মিত নিম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
৯) নিম পাতার গুড়া গোলাপজলে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগান এবং আপনার ত্বক যদি খুব শুষ্ক হয় সেক্ষেত্রে এই প্যাকটিতে সামান্য পরিমাণে মধু এবং দই যোগ করতে পারেন।
১০) এছাড়া স্নানের সময় সারা গায়ে মাখার জন্য নিম সাবান ব্যবহার করতে পারেন কিংবা নিমপাতা ভিজানো জল স্নানের পর গায়ে ঢালতে পারেন এতে যেকোনো ধরণের ত্বকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
চুল পরিচর্যায় নিমের উপকারিতা – Hair Benefits of Neem in Bengali
ত্বকের পাশাপাশি চুলের পরিচর্যাতেও সমানভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে নিম পাতা রস। চুলে নিম পাতা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটি চুলের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে সুস্থ সবল চুল প্রদান করে এবং নিম পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং ইমিউন বুস্টিং বৈশিষ্ট্যগুলি চুলকে সুস্থ রাখে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিম পাতা চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে থাকে। নিম তেল দিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে চুলের বৃদ্ধির হার বেড়ে ওঠে। নিম তেলের সাথে জলপাই, নারকেল কিংবা জোজোবা তেল মিশ্রণ করে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও নিম পাতার পেস্ট মাথায় লাগাতে পারেন। যা চুলকে জীবাণুমুক্ত রেখে সুস্থ সবল করে তুলবে চুল। নিম যেমন শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে, তেমনি রুক্ষ চুলেও আর্দ্রতা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও, চুলকে উকুন এবং খুশকির সমস্যাগুলি থেকে দূরে রাখে এবং এটি মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মূলত নিম গুড়ার সাথে শিকাকাই গুঁড়ো, জল এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে শ্যাম্পু করার 30 মিনিট আগে চুলে ব্যবহার করুন এটি চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে। এছাড়াও যাদের অকালপক্কতা কিংবা টাক পড়ে যাবার মতন সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও একমাত্র সমাধান নিম। নিম চুলকে শক্তিশালী করে হারিয়ে যাওয়া চুলের পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। এছাড়াও নিমের নিয়মিত ব্যবহার চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে নতুন চুল গজাতেও সহায়তা করে। আসুন জেনে নিন তাহলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে নিমের ভূমিকা:
১) উকুন কমাতে নিমের ব্যবহার:
সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল পরিষ্কার চুলের স্বপ্ন সবারই থাকে। কিন্তু উকুন এবং খুশকির মতো সমস্যাগুলি চুল সুস্থ থাকতে দেয় না। তাই চুলের সৌন্দর্য প্রদানে নিম পাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিমপাতার ব্যাবহারের ফলে চুল থেকে উকুন-এর সমস্যা দূর হয়। এর মধ্যে অত্যধিক তিতা ভাব থাকার কারণে এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
১) নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে নিয়ে মাথার তালুতে ভালো করে মাখিয়ে নিন।
২) এবার শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে এটি দু-তিন ঘণ্টা রেখে দিন।
৩) তারপর ভালো করে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
৪) শ্যাম্পু করার পর উকুনের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ে নিন।
৫) সপ্তাহে দু-তিনবার করে টানা দু’মাস এটি ব্যবহার করুন এর ফলে চুল থেকে পুরোপুরি ভাবে উকুন দূর হয়ে যাবে।
৬) নারকেল তেলের সাথে নিমপাতা ভালো করে সিদ্ধ করে নিয়ে যতক্ষণ না পাতার রং বিবর্ণ হচ্ছে ততক্ষণ নারকেল তেলে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
৭) এরপর তেল ঢেলে নিয়ে ঠাণ্ডা করে মাথায় লাগিয়ে দু ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
৮) তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন এবং উকুনের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ে নিন।
৯) সপ্তাহে তিনদিন এটি ব্যবহার করুন একমাসেই তফাৎ বুঝতে পারবেন।
২) খুশকি নিরাময়ে নিম পাতার গুণাগুণ:
মাথার ত্বক অত্যধিক শুষ্ক কিংবা তৈলাক্ত যাই হয়ে যাক না কেন আমাদের খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে নিম পাতার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া নাশক ও ছত্রাক নাশক উপাদান থাকার জন্য এটি চুলের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও নিমপাতা মাথার তালুর শুষ্কতা এবং চুলকানি দূর করে চুলকে সঠিক স্বাস্থ্য প্রদান করে থাকে। খুশকির চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভুমিকা প্রদান করে থাকে। তাহলে জেনে নিন কিভাবে ব্যবহার করবেন খুশকি নিরাময়ে নিম পাতা।
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
১) একবাটি জলে 10-12 টি নিম পাতা নিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নিন।
২) এবার জল ঠাণ্ডা করে শ্যাম্পু করার সময় এই জল দিয়ে ভালো করে চুলে মাসাজ করে নিন। প্রতি সপ্তাহে দুদিন এটি করুন দেখবেন খুশকি দূর হয়ে যাবে।
৩) এছাড়াও নিমপাতা ভালো করে বেটে নিয়ে মাথার চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমবে তার পাশাপাশি খুশকির সমস্যাও দূর হবে। এর পাশাপাশি চুল নরম এবং কোমল হবে।
৪) মধু এবং নিম পাতার রস একসাথে মিশিয়ে সপ্তাহে তিনদিন চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগান দেখবেন এরপরে চুল চকচক করবে।
৫) এছাড়াও আমলকির রস, নিম পাতার রস, লেবুর রস এবং টকদই মিশিয়ে সপ্তাহে দুদিন চুলে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এটি চুলে কন্ডিশনার-এর কাজ করবে।
নিমের পুষ্টিগত মান – Neem Nutritional Value in Bengali
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিমপাতার ব্যবহার বহুক্ষেত্রে প্রচলিত। আমাদের শরীরচর্চায় এবং ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে নিমপাতা। আসুন জেনে নিন নিমপাতার পুষ্টিগত মান।
এক কাপ নিমপাতার পুষ্টিগত মান:
এক কাপ নিমপাতার পুষ্টিগত মান: | |
---|---|
এক কাপ নিমপাতা | 35 গ্রাম |
ক্যালোরি | 45 |
প্রোটিন | 2.48 গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | 8.1 গ্রাম |
ফ্যাট | 0.03 গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | 178.5 মিলিগ্রাম |
আয়রন | 5.98 মিলিগ্রাম |
ফাইবার | 6.77 গ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | 44.45 মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | 23 মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | 88.9 মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | 25.27 মিলিগ্রাম |
দৈনিক 35 গ্রাম নিমপাতা গ্রহণ করা যেতে পারে।
নিম পাতার ব্যবহার – How to Use Neem in Bengali
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পদ্ধতিতে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন। স্বাস্থ্যরক্ষায় নিমের ব্যবহার সরাসরি করতে পারেন। ত্বক এবং চুলের সমস্যার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে নিমপাতার ব্যবহার করতে পারেন। আসুন জেনে নিন কীভাবে নিমপাতার ব্যবহার করবেন।
স্বাস্থ্য রক্ষায় কিভাবে?
১) ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হজম সংক্রান্ত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ এ ধরনের সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে নিম পাতার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
২)সকাল বেলা খালি পেটে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন কিংবা খাদ্যতালিকায় নিমপাতা সিদ্ধ রাখতে পারেন।
৩) দৈনিক নিমপাতার গ্রহণ করার ফলে শরীর থেকে জীবাণু মুক্ত থাকবে। তাই প্রতিদিন নিম গ্রহণ করতে পারেন।
৪) এছাড়াও যারা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন কয়েক ফোঁটা নিম তেল পান করতে পারেন।
৫) কিংবা যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিমপাতা সিদ্ধ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
৬) এছাড়াও নিমপাতা রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীরা ও তার খাদ্যতালিকায় নিমপাতা রাখতে পারেন।
৭) এছাড়া দাঁত এবং মাড়ির ক্ষেত্রেও নিমপাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই নিম পাতা ব্যবহার করার আগে আপনার রোগ অনুযায়ী আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন যে এটি আপনার শরীরে কার্যকর কিনা।
৮) আবার ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে নিম পাতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ত্বকের যেকোনো ধরনের সমস্যা যেমন ব্রন, র্সযা ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯) সেক্ষেত্রে নিমপাতা দিয়ে ঘরে টোনার, ফেসপ্যাক তৈরি করে নিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি খুব কম সময়ের মধ্যেই আপনার ত্বককে সুস্থ এবং সুন্দর করে তুলতে সহায়তা করবে।
১০) চুলের সমস্যার ক্ষেত্রে ও নিমপাতার ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্য সম্মত করে তোলার জন্য চুলে নিম পাতার তেল, নিম পাতার প্যাক কিংবা নিমপাতা দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সিরাম তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
নিম সর্বসম্মতভাবে আপনাকে স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সুন্দর থাকতে সহায়তা করবে।
নিমপাতার ক্ষতিকর দিকগুলি – Side Effects of Neem in Bengali
আমরা সকলেই জানি সব জিনিসেরই কিছু ভালো গুণ এবং কিছু খারাপ গুন থেকে থাকে। তেমনি আমাদের ব্যবহারের উপযোগী একটি উপাদান হওয়া সত্বেও নিমেরও কিছু খারাপ গুণ আছে। এর পাশাপাশি আমাদের মাথায় রাখতে হবে কোনপ জিনিসই অতিরিক্ত ব্যবহার করা ঠিক না, যার ফলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই নিম ব্যবহার করার আগে অবশ্যই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি জেনে নিন।
১) ছোট বাচ্ছাদের ক্ষেত্রে নিম তেলের ব্যবহার কিংবা নিম তেল খাওয়া মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি ভাব, দুর্বলতা মস্তিষ্কের ব্যাধি দেখা দিতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২) গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে নিম পাতা সহায়ক নয়। এটি গর্ভপাতের অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়াও প্রসূতি মহিলাদের ও নিমপাতা থেকে দূরে থাকা উচিত। এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
৩) আপনার যদি অটো ইমিউন থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি নিম পাতার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কেননা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা টিকে খুব সক্রিয় করে তোলে। যার ফলে যারা অটোইমিউন রোগের শিকার তাদের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
৪) যারা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহার করা যথাযথ নয়। এটি কেননা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা নিমের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৫) নিম অনেক সময় বন্ধ্যাত্বতার কারণ হতে পারে। তাই যারা সন্তানের পরিকল্পনা করছেন তারা নিম থেকে দূরে থাকুন।
৬) এছাড়াও কোন শল্যচিকিৎসার আগে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিমের ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
৭) মনে রাখবেন দিনে দুটোর বেশি নিমপাতা একেবারে খাওয়া উচিত না। বেশি পরিমাণে এটি গ্রহণ করা শুরু করলে উপকারের বদলে অপকার হবে।
৮) এছাড়া নিমপাতা গ্রহণের পরে যদি বমি, ডায়েরিয়া, মাথাব্যথা সমস্যাগুলি হয় সে ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।
৯) এছাড়া আপনার শরীরে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী টানা কতদিন নিম পাতা খাওয়া যেতে পারে সেটা একজন বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ একনাগাড়ে এটি খেতে থাকলে শরীরের নানা ক্ষতি দেখা যায়।
১০) খালি পেটে নিম পাতা বেশিদিন খাবেন না। এতে উপকারের বদলে অপকার হবে।
প্রাচীন যুগ থেকেই আমাদের দেশের একটি সুপরিচিত গাছ নিম। মূলত গ্রাম্য এলাকায় বড় বড় নিম গাছ দেখা যায়। তবে শহরাঞ্চলে কোন ও কোন ও বাড়িতে কিংবা রাস্তার ধারে ছোট নিম গাছ দেখা যায়। তবে শোনা যায়, নিম গাছ নাকি আবহাওয়াকে পরিশুদ্ধ করে। সে কারণে অনেক বাড়িতে নিম গাছ লাগাতে দেখা যায়। তাছাড়া ইতিমধ্যেই আমরা জেনে গিয়েছে নিম গাছের ডাল পাতা, রস, ফুল, তেল, গাছের ছাল সবকিছুই কাজে লাগে। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এটি ব্যবহার হয়ে থাকে। চোখের ব্যথা, কৃমি, চর্মরোগ প্রভৃতি নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও নিম পাতার রস চিকেন পক্স, হাম এবং ত্বকের বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসাবে কাজ করে থাকে। এছাড়া গুটি বসন্তের সমস্যা দেখা দিলেও তা কম করতে এবং পক্সের দাগ কমাতে সহায়তা করে। তাই সুস্থ থাকতে দৈনিক নিম পাতার জলে স্নান করুন এবং সুস্থ থাকুন।তা হলে আজ জেনে নিলেন কিভাবে নিম পাতা আমাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? আজ থেকেই আপনার ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যায় নিমের ব্যবহার শুরু করুন এবং অবশ্যই নিমপাতা ব্যবহার করার পর আপনার কি উন্নতি হয়েছে সেটি আমাদের জানাবেন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং অপরকে ভালো রাখতে সহায়তা করুন।